শেয়ার করুন

উপাদান শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অর্থ বহন করে থাকে। যেমন: সাধারণ অর্থে উপাদান বলতে বোঝায় কোন বস্তুবাদ জিনিস তৈরি করতে যা কিছু প্রয়োজন হয়, তাকেই উপাদান বলা হয়। যেমন একটি ঘর তৈরি করার জন্য ইট, সিমেন্ট, বালু ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। এই প্রত্যেকটি জিনিস ওই ঘর তৈরির উপাদান। 

আবার কোন কিছুর অংশ বা ভাগ কেও উপাদান বলা হয়ে থাকে। যেমন: যদি একটি দল গঠন করা হয় তবে সেই দলের উপাদান হলো ওই দলের সদস্যবৃন্দ। আবার গাণিতিক ভাষায়, বিজ্ঞানের ভাষায় উপাদান কে আবার ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিচে আমরা উপাদান কাকে বলে এবং উপাদানের বিভিন্ন সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করব। 

উপাদান কাকে বলে

উপাদান কাকে বলে

যেকোনো ভৌত বস্তুকে গঠনকারী পদার্থ বা পদার্থের মিশ্রণ কে উপাদান বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর যে কোন উপাদান কোন ভৌত বস্তুকে গঠনকারী বিশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ হতে পারে, এমনকি এই উপাদানগুলো জৈব বা অজৈব হতে পারে। তবে পৃথিবীর যেকোনো উপাদান এদের ভৌত ধর্ম, রাসায়নিক ধর্ম, ভূতাত্ত্বিক উৎস কিংবা জৈব ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে। উপাদানকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য উপাদান বিজ্ঞান নামক শাস্ত্র রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র উপাদান এবং তার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। উপাদান সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা তুলে ধরেছেন। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:

  • অধ্যাপক গার্নার এর মতে- “রাষ্ট্র বিধাতার অমোঘ সৃষ্টি নয়, এটি দৈহিক বলপ্রয়োগের ফলশ্রুতিও নয়, কোনো প্রস্তাব বা সম্মেলনের ফসল নয়; এমনকি পরিবারের সম্প্রসারণের মধ্য দিয়েও এর জন্ম হয়নি।”
  • শিক্ষাবিদ রুশো এর মতে-  “Everything is good as it leaves the hand of the author of nature, everything is degenerated in the hands of man” সব কিছুই ভালো যা প্রকৃতি নিজ থেকে মানুষের জন্য তৈরি করে। মানুষের হাতে সব কিছু যেন ধ্বংস হয়।

উপাদান কত প্রকার ও কি কি

সাধারণত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে উপাদানকে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: 

  • ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে,
  • গঠন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে, 
  • ধর্মের উপর ভিত্তি করে। 

প্রথমত আমরা উপাদান সমূহকে এগুলোর ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি। নিচে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: 

  • নির্মাণ সামগ্রী: নির্মাণ কাজে যা কিছু ব্যবহার করা হয় তা সবই ওই নির্মাণ কাজের উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। 
  • অন্তরক নির্মাণ সামগ্রী: নির্মাণ করা হয়েছে এমন যেকোন অবকাঠামোর ভেতরে তাপ ধরে রাখার জন্য অন্তরক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা ওই ভবনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
  • দুর্গল উপাদান সামগ্রী: উচ্চ তাপমাত্রার বিভিন্ন কাজ করতে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তাকে দুর্গল উপাদানসামগ্রী বলা হয়ে থাকে।
  • পারমাণবিক উপাদানসামগ্রী: পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ও পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ তৈরি করতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাকে পারমাণবিক উপাদান সামগ্রী বলা হয়ে থাকে। 
  • জৈব-উপাদানসামগ্রী: জৈব সংশ্রয় বা ব্যবস্থার সাথে আন্তঃক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যেসব উপাদান সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাকে জৈব উপাদান সামগ্রী বলা হয়।
  • বায়ব-মহাকাশ উপাদানসামগ্রী: বিভিন্ন ধরনের বিমান এবং বায়ব-মহাকাশমূলক কর্মকাণ্ডে যেসব উপাদান সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাকে বায়ব-মহাকাশ উপাদানসামগ্রী বলা হয়।

বিভিন্ন ধরনের উপাদান প্রাসঙ্গিক কাঠামো এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মাপের বা বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। উপাদানের কাঠামো এবং গঠন অণুবীক্ষণ এর মাধ্যমে ও প্রকাশ করা সম্ভব। প্রকৌশল ক্ষেত্রে উপাদানগুলোকে আণুবীক্ষণ কাঠামোর উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। নিচের কয়েকটি শ্রেণীবিভাগ তুলে ধরা হলো: 

  • দগ্ধ মৃত্তিকা, 
  • কাঁচ,
  • ধাতু, 
  • বহুলক, 
  • শংকর উপাদান, ইত্যাদি। 

কিছু কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলোকে বৃহৎ-মাপনীর ভৌত ধর্মাবলি দ্বারা তুলনা ও শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যেমন: 

  • যান্ত্রিক ধর্ম, 
  • তাপীয় ধর্ম,
  • অন্যান্য ধর্ম।

সাধারণ যে ধর্ম যান্ত্রিক ধর্মগুলি প্রযুক্ত বলের বিপরীত কোনও উপাদান কীভাবে সাড়া দেবে, তা নির্ধারণ করে। যেমন: 

  • অনমনীয়তা, 
  • সহ তাপমাত্রা, 
  • দৃঢ়তা, 
  • কাঠিন্য।

আবার অন্যদিকে তাপীয় ধর্মের রয়েছে তাপীয় পরিবাহিতা এবং তাপ ধারকত্ব। এই উপাদানগুলো দ্বারা তাপের সঞ্চালন এবং সংরক্ষণের ব্যাপার গুলোর সাথে পুরোপুরি ভাবে জড়িয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন শর্তে উপাদানগুলির যেকোন পরিমাপযোগ্য আচরণের নিরিখে এগুলিকে তুলনা ও শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। 

উপাদানের গুরুত্ব আলোচনা কর

উপাদান কাকে বলে

উপাদান বলতে সাধারণত কোনো কিছুর গঠনে ব্যবহৃত মৌলিক অংশগুলোকে বোঝায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপাদানের গুরুত্ব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি ক্ষেত্রে উপাদানের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১. ইতিহাসের উপাদান

ইতিহাস রচনার জন্য উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপাদান ছাড়া কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব নয়।

ইতিহাসের উপাদানগুলোকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: লিখিত উপাদান ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সাহিত্য, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন, যেমন- মুদ্রা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি।

২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপাদান

আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির পেছনে বিভিন্ন উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: কম্পিউটার চিপ তৈরির জন্য সিলিকন, স্মার্টফোন তৈরির জন্য বিভিন্ন ধাতু ও প্লাস্টিক ইত্যাদি উপাদান ব্যবহৃত হয়।

৩. খাদ্য উপাদান

মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্য উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উপাদানগুলো বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে, যা শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয়। যেমন- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল ইত্যাদি।

৪. শিল্পের উপাদান

শিল্প উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন কাঁচামাল বা উপাদান প্রয়োজন। বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করা শিল্পখাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেমন- পোশাক শিল্পের জন্য তুলা, ইস্পাত শিল্পের জন্য লোহা ইত্যাদি।

নির্মাণ শিল্পের উপাদান: নির্মাণ শিল্পের জন্য বিভিন্ন উপাদান প্রয়োজন। যেমন- ইট, বালি, সিমেন্ট, পাথর, লোহা ইত্যাদি।

জৈব ও অজৈব উপাদান কাকে বলে

জৈব এবং অজৈব উপাদান কাকে বলে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো: 

জৈব উপাদান

যে সকল উপাদান জীব থেকে বা জীবজগত থেকে পাওয়া যায়, তাদেরকে জৈব উপাদান বলে। এই উপাদানগুলি মূলত কার্বন-ভিত্তিক যৌগ দ্বারা গঠিত। উদাহরণ: উদ্ভিদ, প্রাণী, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, তেল, কাঠ, কয়লা ইত্যাদি।

অজৈব উপাদান

যে সকল উপাদান জীব থেকে পাওয়া যায় না, বরং মাটি, পানি, বায়ু এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যায়, তাদেরকে অজৈব উপাদান বলে। এই উপাদানগুলি সাধারণত কার্বন-ভিত্তিক যৌগ নয়। উদাহরণ: মাটি, পানি, খনিজ পদার্থ, লবণ, ধাতু, পাথর, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।

উপাদান ও উপকরণের মধ্যে পার্থক্য

উপাদান কাকে বলে

উপাদান এবং উপকরণ শব্দ দুটি প্রায়শই একই প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হলেও, এদের মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো:

উপাদান

উপাদান বলতে সাধারণত কোনো কিছুর প্রাথমিক অংশ বা গঠনকারী বস্তুকে বোঝায়। এটি কোনো একটি বিশেষ বস্তু তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত মৌলিক পদার্থ। উপাদানগুলো সাধারণত অপরিশোধিত বা মৌলিক অবস্থায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: একটি বিল্ডিং তৈরির উপাদান হলো ইট, বালি, সিমেন্ট, রড ইত্যাদি।

উপকরণ

উপকরণ হলো সেই বস্তু বা জিনিস, যা কোনো কাজ সম্পন্ন করতে বা কোনো কিছু তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। উপকরণগুলো সাধারণত প্রক্রিয়াজাত বা প্রস্তুত করা হয়। উপকরণগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, রান্না করার উপকরণ হলো চাল, ডাল, সবজি, তেল, মশলা ইত্যাদি।

আরো পড়ুন:

উপাদান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

শিল্পের উপাদান কি কি?

এক কথায় যে উপাদান গুলো একজন শিল্পীকে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সাহায্য করে তাকে শিল্পের উপাদান বলে। শিল্পের উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে: আকৃতি, টেক্সচার, ফর্ম, স্থান, রঙ এবং মান, চিহ্ন তৈরির সংযোজন এবং বস্তুগততা।

ভৌত উপাদান কী কী?

ভৌত উপাদান গুলো হল: আলো, তাপ, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা প্রভৃতি। ভৌত উপাদানের মধ্যে নির্দিষ্ট অঞ্চলের অক্ষাংশ, পর্বতমালা ও উপত্যকার দিক, ঢাল বা খাড়া অবস্থা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

উপাদান কথার অর্থ কি?

উপাদান বলতে বোঝায় যা একটি পদার্থ বা পদার্থের মিশ্রণ যা একটি বস্তু গঠন করে। প্রত্যেকটি উপাদানকে ভৌত এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বা তাদের ভূতাত্ত্বিক উত্স বা জৈবিক ফাংশনের ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।

উপাদান সম্পর্কে আমাদের মতামত

আমাদের চারপাশে যত বস্তু রয়েছে তা সবকিছুই কোন না কোন উপাদান দিয়ে তৈরি। আজকের আর্টিকেলে আমরা উপাদান কাকে বলে, উপাদান কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই সম্পর্কিত যদি অন্য কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। এবং এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি জুড়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *