সামাজিক মূল্যবোধ কি? কত প্রকার, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

শেয়ার করুন

একটি জাতির নৈতিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে সংস্কৃতি। একটা মানুষের ভেতরে থাকা উচিত এবং অনুচিত বোধ মূল্যবোধের উৎস। যা মানুষ সবসময় ভালো, কল্যাণকর ও অপরিহার্য বিবেচনা করে মানসিকভাবে পরিপক্ক করে তোলে তাকে সামাজিক মূল্যবোধ। শিশু প্রথম সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা তার পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।

সামাজিক মাপকাঠির মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের পরিমাপ করা হয়। সামাজিক মাপকাঠির ভিত্তিতে সামাজিক মূল্যবোধ কি তা বলতে গেলে বলা যায়, মূ্ল্যবোধ মানুষের আচার-ব্যবহার, ধ্যান-ধারণা, চাল-চলন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার মাপকাঠি স্বরূপ।

সমাজের নিয়মের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটে। যেমন: পূর্বে ছিল বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথা ইত্যাদি, সময়ের সাথে সাথে এগুলোর আর কোন অস্তিত্ব নেই। সামাজিক মূল্যবোধ কি, সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

সামাজিক মূল্যবোধ কি

সামাজিক মূল্যবোধ কি

সামাজিক মূল্যবোধ হল সেইসব বিশ্বাস, আদর্শ, এবং রীতিনীতি যা সমাজের মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করে। সামাজিক মূল্যবোধ একটি সমাজের ভিত্তি তৈরি করে এবং মানুষের আচরণকে সঠিক পথে চালিত করে।

সহজ ভাষায়, সামাজিক মূল্যবোধ হল সমাজের মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিষয়ে কিছু সাধারণ ধারণা। 

এই ধারণাগুলো মানুষকে একত্রে বসবাস করতে এবং সমাজের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা, অতিথির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, সত্য কথা বলা, এবং সাহায্য করা ইত্যাদি সামাজিক মূল্যবোধের উদাহরণ। একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিহার্য। এগুলো মানুষকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে এবং সমাজের উন্নতিতে সাহায্য করে।

সামাজিক মূল্যবোধ কত প্রকার ও কি কি

সামাজিক মূল্যবোধকে ৬টি ভাগ করা যেতে পারে। সামাজিক মূল্যবোধের প্রকারভেদ গুলো হল: 

  • অর্থনৈতিক মূল্যবোধ, 
  • রাজনৈতিক মূল্যবোধ, 
  • সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ,
  • নৈতিক মূল্যবোধ,
  • আইনগত মূল্যবোধ,
  • অর্থনৈতিক মূল্যবোধ।

নিচে সামাজিক মূল্যবোধের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

অর্থনৈতিক মূল্যবোধ

অর্থনৈতিক মূল্যবোধ মূল্যবোধ মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্মের সাথে জড়িত। যেমন – সৎ পথে উপার্জন করা, অপচয় না করা, গরিবদের সাহায্য করা ইত্যাদি। অর্থনৈতিক মূলত শুধু ব্যক্তিত্বের প্রকাশ নয় বরং সমাজের ন্যায় পরায়ন ব্যক্তি হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষের অর্থনৈতিক মূল্যবোধ থাকা জরুরি।

রাজনৈতিক মূল্যবোধ

এই মূল্যবোধ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত। যেমন – ভোট দেওয়া, দেশের প্রতি অনুগত থাকা, সরকারের সমালোচনা করা ইত্যাদি। প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক মূল্যবোধ থাকা ও জরুরী। রাষ্ট্রের উন্নয়ন, রাষ্ট্রের ভালো এবং খারাপ উভয় দিক প্রতিটি ব্যক্তি পর্যায়ে আলাদা আলাদা ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ

এই মূল্যবোধ কোনো সমাজের ঐতিহ্য, রীতিনীতি, ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। যেমন – অতিথিকে সম্মান জানানো, বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করা, নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসা ইত্যাদি। সামাজিক মূল্যবোধ সাধারণত পরিবার থেকে গড়ে ওঠে। একেক পরিবারের নিয়ম কানুন অন্য পরিবার থেকে আলাদা হয়ে থাকে। সুতরাং, এক এক পরিবারের সংস্কৃতির মূল্যবোধ যেহেতু একেক রকম হয়ে থাকে তাই পরিবারের শিশুদের সংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে খুব ছোট থেকেই পিতামাতাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

নৈতিক মূল্যবোধ

নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ ইত্যাদি ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত। যেমন – সত্য কথা বলা, অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা ইত্যাদি। ব্যক্তি পর্যায়ে নৈতিক মূল্যবোধের কারণে মানুষ ভালো কে ভালো এবং মন্দকে মন্দ বলতে শেখে। নৈতিক মূল্যবোধ ব্যতীত একজন মানুষ সমাজে টিকে থাকতে পারে না। আবার নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা ও একজন শিশুর প্রথমত তার পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।

আইনগত মূল্যবোধ

আইনগত মূল্যবোধের কারণে মানুষ সমাজে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি থেকে বিরত থাকে। এই মূল্যবোধ সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তৈরি হয়। যেমন – আইন মেনে চলা, অন্যের অধিকার রক্ষা করা, অপরাধ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি। আইনগত মূল্যবোধ ভেতরে থাকলে মানুষ সমাজের জন্য অকল্যাণকর হয় এমন কোন কাজ নিজেও করতে পারেন এবং অন্যকে দিয়েও করাতে পারে না।

পারিবারিক মূল্যবোধ 

এই মূল্যবোধ পরিবারের সদস্যদের মধ্যেকার সম্পর্ক ও দায়িত্ববোধের উপর ভিত্তি করে গঠিত। যেমন – পিতামাতাকে শ্রদ্ধা করা, ভাইবোনদের মধ্যে ভালোবাসা, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন ইত্যাদি। পারিবারিক মূল্যবোধ পরিবার থেকেই তৈরি হয় এবং পারিবারিক মূল্যবোধের কারণে মানুষ পরিবারের পাশাপাশি সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে।

সামাজিক মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য

সামাজিক মূল্যবোধ কি

সামাজিক মূল্যবোধের বিভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হলো: 

পরিবর্তনশীলতা

সামাজিক মূল্যবোধ স্থির নয়, এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। সমাজের পরিস্থিতি, প্রযুক্তি, এবং মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধেও পরিবর্তন আসে। কয়েক বছর আগেও যেসব রীতিনীতি সামাজিক মূল্যবোধের অংশ ছিল এখন তার কোন অস্তিত্ব নেই। আবার বর্তমান সময়ে যেগুলো সামাজিক মূল্যবোধের অংশ কয়েক বছর পরে হয়তো বা এগুলোর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং সামাজিক মূল্যবোধ সর্বদা পরিবর্তনশীল।

আপেক্ষিকতা

সামাজিক মূল্যবোধ সার্বজনীন নয়, এটি সমাজ ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ প্রচলিত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে একজন শিশু শৈশব থেকেই পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষা বা সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা পরিবার থেকে গ্রহণ করে থাকে। সর্বোপরি শিশু যে সমাজে বাস করে সেখান থেকেই সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জন করে থাকে।

সমষ্টিগত চেতনা

সামাজিক মূল্যবোধ ব্যক্তিগত নয়, এটি সমাজের সকলের মধ্যে এক ধরনের সমষ্টিগত চেতনা তৈরি করে। এই চেতনা মানুষকে সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করে। সমাজের সকল মানুষ এক হয়েই সকল ধরনের উন্নতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে এই চিন্তার ভিত্তিতে এই সমষ্টিগত চেতনা তৈরি হয়। সমাজের সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য সমষ্টিগত চেতনা একান্ত জরুরী।

নৈতিক মানদণ্ড

সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের আচার-আচরণ এবং কাজের ভালো-মন্দ বিচারের জন্য একটি নৈতিক মানদণ্ড তৈরি করে। নৈতিক মানদন্ড শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, সমাজের জন্য ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিক মানদণ্ডের কারণে মানুষ ভালো কে ভালো এবং মন্দকে মন্দ বলতে শেখে। সমাজের যে কোন কিছু ভাগাভাগির ক্ষেত্রে নৈতিক মানদণ্ডের কারণে মানুষ ন্যায্য বিচার করার সুযোগ লাভ করে।

নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি

সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সমাজকে সুশৃঙ্খল রাখতে সাহায্য করে। সামাজিক মূল্যবোধের সবগুলো গুণ যখন মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তখন তার ভেতর প্রত্যক্ষভাবে একটি নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি কাজ করে। সমাজের প্রতিশোধন হয় এমন কোন কাজে সে নিজেও অংশগ্রহণ করতে পারে না এবং অন্য কেও অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করে না।

ঐক্য স্থাপনকারী

সামাজিক মূল্যবোধ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে। এটি সামাজিক সংহতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঐক্য স্থাপনকারী সামাজিক মূল্যবোধ মানুষ সাধারণত সমাজ থেকে সেই শিক্ষা লাভ করে থাকে। একটা সমাজের মধ্যে ঐক্য স্থাপনকারী সংযোগ যতটা ভালো তত বেশি সমাজের উন্নতি সাধন হবে এটাই স্বাভাবিক।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তর

সামাজিক মূল্যবোধ এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরিত হয়। এটি সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

সামাজিক মূল্যবোধ একটি জটিল বিষয়, এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি, আগের প্রজন্মে যে সামাজিক মূল্যবোধগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এখনকার প্রজন্মে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতে এভাবেই সামাজিক মূল্যবোধ চক্রায়িত হতে থাকে।

সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি কি

সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি হল সেইসব বিশ্বাস, আদর্শ, এবং রীতিনীতি যা সমাজের মানুষ তাদের জীবনে সঠিক ও ভুল, ভালো ও মন্দ, ন্যায় ও অন্যায় এর মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যবহার করে। এই মূল্যবোধগুলো সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে, মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সামাজিক মূল্যবোধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো: 

  • নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে, এর মধ্যে থাকতে পারে সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বিশ্বাস। 
  • সংস্কৃতিক ঐতিহ্য সামাজিক মূল্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 
  • সমাজে বিদ্যমান থাকা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মহাশাসন এবং অনুশাসন সামাজিক মূল্যবোধের উৎস হিসেবে কাজ করে। 
  • সমাজের আইন এবং শাসন ব্যবস্থা সামাজিক মূল্যবোধকে সমর্থন করে এবং মানুষের মধ্যে এগুলো মেনে চলার প্রবণতা তৈরি করে। 
  • সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে শিক্ষা অন্যতম মাধ্যম। শিক্ষার সঠিক ব্যবহার সমাজে প্রয়োগ করলে সামাজিক মূল্যবোধ প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়।

সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্ব

সামাজিক মূল্যবোধ কি

সামাজিক মূল্যবোধ হল সেইসব বিশ্বাস, আদর্শ, এবং নিয়মকানুন যা একটি সমাজের মানুষ তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং যা তাদের আচরণ ও সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। এই মূল্যবোধগুলি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং মানুষের মধ্যে সহযোগিতা ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো:

ঐক্য ও সংহতি

সামাজিক মূল্যবোধ একটি সমাজের মানুষকে একতাবদ্ধ করে এবং তাদের মধ্যে সংহতি তৈরি করে। যখন মানুষ একই মূল্যবোধ ধারণ করে, তখন তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।

শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ

সামাজিক মূল্যবোধ সমাজের সদস্যদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই মূল্যবোধগুলি মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সমাজের নিয়মকানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করে।

সহযোগিতা ও সহমর্মিতা

সামাজিক মূল্যবোধ মানুষকে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে এবং সাহায্য করতে উৎসাহিত করে। যখন মানুষ সামাজিক মূল্যবোধের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, তখন তারা একে অপরের দুঃখে কষ্ট পায় এবং সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে।

ন্যায়বিচার ও সাম্যতা

সামাজিক মূল্যবোধ সমাজে ন্যায়বিচার ও সাম্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মূল্যবোধগুলি মানুষকে সমান অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং বৈষম্য দূর করতে উৎসাহিত করে।

সামাজিক উন্নয়ন

সামাজিক মূল্যবোধ একটি সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ তাদের সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তখন তারা সমাজের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ

সামাজিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও অনুশাসনের অবক্ষয় দিন দিন বেড়ে চলেছে। সভ্যতা তৈরি হওয়ার সময় যেসব উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছিল তার অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। তরুণ সমাজের একটি অংশ প্রতিনিয়ত দূরবিনীত হয়ে পড়ছে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে। বর্তমান সমাজের জন্য সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় একটা জটিল সমস্যা। নিচে এর কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো: 

পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব

পরিবার হলো সমাজের ভিত্তি। পরিবারে যদি সঠিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলীর চর্চা না হয়, তাহলে এর সদস্যদের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা যায়।

শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা

শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি শুধু জ্ঞান অর্জনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের বিকাশের দিকে নজর না দেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

প্রযুক্তির অপব্যবহার

আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এর অপব্যবহারের কারণে তরুণ প্রজন্ম ভুল পথে চালিত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অশ্লীল কনটেন্ট এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

দারিদ্র্য ও বেকারত্ব

দারিদ্র্য ও বেকারত্ব সমাজে হতাশা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। মানুষ যখন তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা অনৈতিক পথে হাঁটতে পারে। 

সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণগুলি কি কি?

মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ হলো ধর্মবিমুখতা, ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মীয় সংকীর্ণতা, অসহিষ্ণুতা।

মূল্যবোধের অভাব কি?

যখন কোন ব্যক্তির ভেতর নৈতিক ভিত্তি থাকে না তখন সেই ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধের অভাব কাজ করে।

মূল্যবোধের অভাবের তিনটি ফলাফল কি কি?

মূল্যবোধের অভাবে তিনটি ফলাফল হলো: কাঠামোগত অবিচার, নৈতিক অবক্ষয় এবং আস্থার ভাঙন বেড়ে যাওয়া।

📌 আরো পড়ুন 👇

সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আমাদের মতামত 

সমাজে টিকে থাকার জন্য সামাজিক মূল্যবোধের কোন বিকল্প নেই। সামাজিক মূল্যবোধ একটা মানুষকে সমাজে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকের আর্টিকেলে আমরা সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে যদি আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। এবং এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

আমি আসিফ আহমেদ। ২০২২ সাল থেকে আমি ব্লগিং নিয়ে চর্চা করছি। সকলের মাঝে জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেয়ার অনুপ্রেরণা থেকে আর্টিকেল লেখা।

Leave a Comment